সেদিন রাস্তায় হাঁটার পথে আমার পূর্বতন অফিসের আয়া নাহিদের সঙ্গে দেখা। হাঁটতে হাঁটতে কুশল জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কথায় কথায় জানাল, তার মেয়েটিকে পড়াশোনা শেষ না করিয়েই বিয়ে দিয়েছে। তবে মেয়ের ভাগ্য ভালো। সে শ্বশুরবাড়িতে থেকেও পড়াশোনা করছে। অনার্স পাস করে এখন মাস্টার্স পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ছেলেটা ডাক্তারি পড়ছে একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে। ফাইনাল দেবে নাকি ইন্টার্নি করছে ঠিক করে সে জানে না। নাহিদ আরও জানালও তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে এখন আর শরীর সাপোর্ট করছে না বলে বছর খানেকের মধ্যেই রিটায়ার্ড করবে। বললাম, পেনশনের টাকা ছেলেমেয়েকে সমান ভাগ করে দিও।
সে বলল, তা কী করে হয়? মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। তাকে বেশি দেব কেন? ওকে না দিলেইবা কী? ছেলে প্রাইভেট ক্লিনিক করবে, তার অনেক টাকা লাগবে। ছেলে তাই আমার পেনশনের টাকা সবটা তার জন্যই রাখতে বলেছে।
আমার যুক্তি নাহিদ সবিনয়ে প্রত্যাখান করবে বুঝে আর কথা বাড়াইনি। কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক বন্ধুর পোস্টে একটা লেখা পড়লাম। লেখাটিতে তিনি যা বলেছেন, তা হলো একদা নতুন কর্মস্থলে গিয়ে দেখলেন, কলেজের বার্ষিক ভোজসভায় প্রথম পঙ্ক্তিতে পুরুষ শিক্ষকদের সঙ্গে পুরুষ অফিস স্টাফরাও খেতে বসলেন। আর নারী শিক্ষকরা করলেন খাবার পরিবেশনের কাজ। বাড়ির মতোই তাদের খাওয়ার পর তারা নিজেরা খেতে বসলেন। পোস্টদাতা লেখক একজন পুরুষ মানুষ কিন্তু বিষয়টা তার কাছে অন্যায্য মনে হওয়াতে প্রতিবাদ করলেন। বলা হলো এটাই নিয়ম। তিনি লিখেছেন, নারী শিক্ষকরা অধঃস্তন কর্মচারীদের পরিবেশন করে খাওয়ালে কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু শুধু তারা নারী বলেই শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও এই দায়িত্ব তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কলেজে কোনো নারী শিক্ষক না থাকতেন তখন নিশ্চয় পুরুষ শিক্ষকরা তাদের স্টাফদের পরিবেশন করে খাইয়ে তারপর নিজে খেতেন না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশনের দায়িত্ব সেই পুরুষ কর্মচারীদেরই পালন করতে হতো। কলেজের এই নিয়ম তার কাছে যথাযথ মনে হয়নি। অচিরেই তিনি এই নিয়ম পরিবর্তন করেন এবং কলেজে কোনো শিক্ষক নারী হওয়ার জন্য বৈষম্যের শিকার না হন সেরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কিন্তু তিনি চলে আসার পর আবার কলেজে নাকি সেই পুরনো নিয়মই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
গল্পটি উপস্থাপন করতে হলো কারণ পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করা পুরুষপ্রবররা কর্মক্ষেত্রেও তাদের নারীসহকর্মীদের এমনকি তার কার্যালয়ের উচ্চপদে অবস্থান করা নারীকেও গৃহাভ্যন্তরের মতো অধঃস্তন হিসেবে দেখেন।
আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ায় বসে আছেন যিনি তিনি একজন নারী। বিগত তিন দশক ধরে মাঝখানে বছর দুয়েক সময় ব্যতীত দুজন নারী পদটি অলঙ্কৃত করে আছেন। সেই সুবাদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বেশ কয়েকজন নারী এই সময় নিয়োজিত হয়েছেন এবং রয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার পদেও আছেন একজন নারী। কিছুকাল ধরে প্রশাসনের কিছু উচ্চপদেও দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন বেশ কিছু নারী। নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নের পথে এসব এক-একটি মাইলফলক। রাজনীতির মাঠ এখন নারীদের পদচারণায় মুখরিত। কিন্তু তার মানে কি এই- নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে? একটি সংসারেও তো নারী পুরুষ সকলেই কাজ করেন। নারী হয়তো একটু বেশিই করেন। কিন্তু সংসারে কর্তৃত্ব করে কে? সিদ্ধান্ত নেয় কে? সংসারের মালিক কে? আমরা সকলেই জানি, সে নারী নয়। তাই রাজনীতির মাঠ বা মিছিলের রাজপথে বা জনসভায় নারীর অংশগ্রহণের সংখ্যা দেখেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় না। দেখতে হবে তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। একবার একটি জেলা শহরের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সভায় গিয়েছিলাম। দেখলাম সভার ঐ দলটির জেলা নারী সভানেত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো। সেই সভামঞ্চের চেয়ারগুলো জেলার বড় বড় নেতাদের সঙ্গে যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনের প্রধানরা অলঙ্কৃত করলেও নারী সংগঠনের নেত্রীর জায়গা হয়নি। নেত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হলো। মনে রাখতে হবে, দিবসটা নারী দিবস ছিল।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে সম্পদ সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে একটি গ্রামের তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে মতবিনিময়সভা হচ্ছিল। সেই সভায় জনৈক শিক্ষক যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি তার বক্তব্যে বললেন মুসলিম ল অনুযায়ী যা আছে সেটা তো আগে পাই। তবে কি আপনি সমঅংশীদারিত্ব চান না? তিনি বললেন, সমঅংশীদারিত্বের চেয়ে আমি আমার শিশুকন্যার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তাছাড়া যৌতুকের অবসান চাই। এটা একটা বিশ্রী প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে- মা-বাবাকে তার কন্যা সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে নানা উপঢৌকনও দিতে হবে।
একদিন কর্মস্থল থেকে ফিরছি। বাসের সহযাত্রী একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। কথায় কথায় পরিচয় হলো। দেখা গেল তার হাসব্যান্ড আমার পরিচিত। আমার পূর্ববর্তী কর্মএলাকায় তিনি কোনো একটি বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা। একঘণ্টার আলাপচারিতার অধিকাংশ সময়জুড়ে ভদ্রমহিলা তার চাকরি ও সন্তানবিষয়ক সমস্যা নিয়েই কথা বললেন। তাদের আবাস জেলা সদরে কিন্তু দুজনেরই কর্মস্থল প্রত্যন্ত এলাকায়। তাদের তিনটি সন্তানের বড়টা মাত্র হাইস্কুলে উঠেছে। তার বাবা-মা রিটায়ার্ড করার পর এতদিন সঙ্গে ছিলেন। এখন আর থাকতে চাইছেন না। নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকবেন। তারা চলে গেলে সন্তানগুলোকে কে স্কুলে নেবে, কে আনবে এবং বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে একা একা বাড়িতেইবা তারা থাকবে কী করে সেসব ভেবে তিনি দিশেহারা। দিশেহারা হওয়ার অবস্থাই বটে। তাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চাকরিটাই না হয় ছেড়ে দেবেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। লেখাপড়া করা তো সহজ বিষয় নয়। কত পরিশ্রম, মা-বাবার কত টাকা খরচ এবং সরকারেরও। কলেজে পড়াতেও ভালোই লাগে। ছাত্রছাত্রী, সহকর্মীদের সম্মান, মা-বাবা, হাসব্যান্ড পরিবারের বাইরে একটা নিজস্ব পরিচিতি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সব তো এই চাকরিই দিয়েছে। কিন্তু সন্তানের নিরাপত্তা? সেটা তো সবার আগে। না হাসব্যান্ড চাপ দেননি চাকরি ছেড়ে দিতে। কিন্তু সংসার সন্তান কর্মক্ষেত্রকে একই সঙ্গে সামলানোর চাপতো আছে। সেই চাপের ভার নেওয়ার অংশীদার নেই বলে ঐ কলেজ শিক্ষকের মতো অসংখ্য শিক্ষিত নারীকে এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিছিয়ে যেতে হয়।
গল্প আর না বাড়িয়ে এবার মূল কথায় ফিরে আসি। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র সমাজ এবং পরিবারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে ব্যক্তিকেও। সে নারী পুরুষ যেই হোক না কেন! শেষেরটা দিয়েই শুরু করি। কলেজ শিক্ষক নারীটি যে চাকরি ছাড়তে চাইছেন যে চাকরিটি তার নিজস্ব পরিচয়, সম্মান ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল সেটা তিনি ধরে রাখতে পারছেন না কেন? প্রথমত পরিবার তার পাশে দাঁড়াচ্ছে না। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা এখনো করেনি। এদেশে লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মা তাদের সন্তানের নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঘরের বাইরের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে। যারা ঝুঁকি নিতে পারেনা তারা চাকরি ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেয় কারণ যদি কোনো বাচ্চার কিছু হয়তো পরিবার ও সমাজ সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেয় ঐ মায়ের ওপর।
যদি পরিবারটি একটু স্বচ্ছল থাকে তখন বলা হয়ে আগে সন্তান ও সংসার তারপর পারে যদি তো চাকরি করবে। কিন্তু শিশুটি কি কেবল ঐ মায়ের? তাহলে তার নিরাপত্তার জন্য মাকেই কেন ভাবতে ভাবতে দিশাহারা হতে হবে?
কিন্তু একজন আয়া নাহিদের ছেলের ডাক্তারি পড়ার জন্য রোজগারের সর্বস্ব টাকার মালিকানা চায় যে ছেলে, সে একদিন সংসার ও সন্তানের দোহাই দিয়ে হয়তো বউকে চাকরি করতে দেবে না। যেরকম হচ্ছে চারপাশে। বউগুলোও সংসার ও সন্তানের জন্য নিজের সত্তা বিসর্জন দেয়। যারা না দেয় তাদের সংসার সম্পর্ক টালমাটাল হয়, ভেঙেও যায়। নাহিদ নারী হলেও পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি। তাই সে মেয়ের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে এবং পেনশনের টাকা মেয়েকে দিতে চায় না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরাও অবচেতনে পুরুষতন্ত্রকেই লালন করেন। তাই আমার ফেসবুক বন্ধুর সহকর্মী কলেজের শিক্ষকরা জেন্ডার বৈষম্য মেনে নিয়ে কর্মস্থলে গিয়েও খাবার পরিবেশন করেন। আরেকজন স্কুল শিক্ষিকা কন্যাশিশুর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং যৌতুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমঅধিকার নিয়ে ভাবেন না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়টা যে একরৈখিক নয় সেটা তারা বুঝতে পারেন না। কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ব্যাপক নারীসমাজ পুরুষতন্ত্রের বহুরৈখিক অভিঘাত সম্পর্কে সচেতন নন বলে সমঅংশীদারিত্ব সমমর্যাদা সম্পর্কেও কোনো ধারণাই রাখেন না। তাই কন্যাশিশুর নিরাপত্তাহীনতা, শিশুকন্যাসহ যেকোনো বয়সের নারীর প্রতি ধর্ষণ, সহিংসতা, যৌতুকের জন্য নির্যাতন যে একই সূত্রে গাথা সেটা বুঝতে পারেন না। পারেন না বলে একজন জেলা পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের নারী নেত্রীকে পুরুষ নেতাদের জায়গা করে দেয়ার জন্য মঞ্চ ছেড়ে দিতে হয়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যান কিন্তু প্রতিবাদ জানাতে পারেন না।
তাই পরিবার বলেন রাষ্ট্র বলেন আর সমাজ তো এই আমাদের পরিবারের মানুষেরাই তা সব জায়গায় যদি নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠিত না হয় যতদিন পর্যন্ত সকল কাজে সকল অধিকারে সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত না হয় ততদিন যৌতুকের জন্য নির্যাতন, ধর্ষণ সহিংসতা, ঘরে বাইরে নারীর মর্যাদাহীনতা বিরাজমান থাকবেই। কিন্তু শেষপর্যন্ত নারী নির্যাতন, সহিংসতা ও নারীর মর্যাদাহীনতার দাম একা নারী চুকায় না। চুকাতে হয় নারী-পুরুষ সকলকেই। পরিবার সমাজ রাষ্ট্রকে। আখেরে ক্ষতি হয় সামগ্রিকভাবে মানবতারই। তাই সকলকেই পুরুষতন্ত্রের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চর্চা করতে হবে মানবাধিকারের। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিশ্চিত করতে হবে সমমর্যাদা ও সমঅংশীদারিত্ব। এখানে সরকারের অনেক দায়িত্ব। কারণ রাষ্ট্রের সংবিধানে সেকথা বলা আছে। জাতিসংঘের সিডও সনদে স্বাক্ষর করেও রাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করে সমমর্যাদা সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। সেইসঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এবং নারীকেও বেরিয়ে আসতে হবে। সকল বাধা অতিক্রম করে অধিকার বুঝে নিতে হবে। বেরিয়ে এলে যে অর্জন করা যায় তার উদাহরণস্বরূপ আর একটি ছোট্ট গল্প বলে শেষ করব।
আমাদের সকলেরই জানা আছে এখনো গ্রাম্য সালিশ ও বিচার ব্যবস্থা প্রবলভাবে বিদ্যমান আছে গ্রাম-গঞ্জে। তো বেশ কয়েক বছর আগে সেরকম একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নারী অধিকারকর্মী হালিমা জহুরাসহ আরও জনাকয়েক নারী যারা কখনো স্কুলের চৌকাঠ ডিঙায়নি কিন্তু নারী সংগঠন করে বলে সমঅধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছে। একদিন গ্রামে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন হলে তারা ওখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। সালিশকাররা জানতে চায় তারা সেখানে কেন এসেছে। ওদের নেত্রী হালিমা বলে তারা জানতে চায়- গ্রামে যে সালিশ বিচার হয় সেখানে তাদের ডাকা হয় না কেন? গ্রামের যেকোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে সে বিষয়ে তাদেরও জানার অধিকার যেমন আছে তেমনি তারা তাতে সিদ্ধান্তও জানাতে পারে। সালিশের লোকজন অবাক হয়ে হালিমাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। হালিমা আরও বলে, দেশে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। রাষ্ট্র দিয়েছে।
বিশ্বাস না হলে যারা রাষ্ট্র চালায় তাদের জিজ্ঞাসা করেন। এরকম পরিস্থিতিতে সেদিন আর সালিশ হয়নি। পরবর্তী সালিশের দিন হালিমাদের ডাকা হলো। যথাসময়ে হালিমারা যখন সেখানে উপস্থিত হয় তখন তাদের চাটাইতে বসতে বলা হয়। অন্যান্য বিচারক চেয়ার ও বেঞ্চিতে বসা। হালিমারা বসে না। বিচারও শুরু হয় না। তখন তারা প্রশ্ন করে ওরা বসছে না কেন? হালিমা জানায় আমরা সমান সমান অধিকার চাই।
আপনারা চেয়ারে বসবেন আর আমরা চাটাইতে বসব তা কী করে হয়? হয় সকলে চাটাইতে বসবে নয়তো চেয়ারে। এখন ঠিক করেন কী হবে? বিচারকরা তারপর সকলের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন।
হালিমাদের গল্পের মতো সবসময় সবজায়গায় একই কৌশল খাটবে সেটা বলছি না। তবে উদ্যোগ নিলে, প্রচেষ্টা চালালে সেটা হোক ব্যক্তি বা পরিবার বা রাষ্ট্র সকলের পক্ষেই সম্ভব। আর খুব সম্ভব হবে সকলের প্রচেষ্টা একসঙ্গে মিলে গেলে।
স্বাতী চৌধুরী : কথাসাহিত্যিক, নারী অধিকারকর্মী ও সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সূত্র : খোলা কাগজ