বেগম রোকেয়ার বিভিন্ন লেখায় নারী নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বব্যাপী নারীদের বিচরণের যুগেও সর্বত্র চলছে নারী নির্যাতন। ঘরে-বাইরে সবখানে নারীরা অনিরাপদ। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিগত দু’বছরের নারীর প্রতি সহিংসতার একটি তুলনামূলক চিত্রে আমরা পাই সব ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা। তথ্যগুলো বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, গত দু’বছরে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৯০ জন, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০০১ জন, যাদের মধ্যে ৪৮২ জন স্বামী কর্তৃক নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮৬৭ জন নারী। এ ছাড়াও এসিড সন্ত্রাস, পাচার, অপহরণসহ নানা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে গবেষণা হবে, তাকে সবাই জানবে, তার আদর্শে সবাই উজ্জীবিত হবে- এমন লক্ষ্যে পায়রাবন্দে স্থাপিত হয় রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দু-তিন দিনের কিছু কর্মসূচি ছাড়া সারা বছর ফাঁকাই পড়ে থাকে উন্নতমানের এ স্থাপনাটি। সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় দেখভাল না থাকায় তেমন কাজে আসছে না স্মৃতিকেন্দ্রটি।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রোকেয়ার আদর্শ ধারণের বিকল্প নেই। এর জন্য সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নারীদেরকে তাদের যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হোক। নারীদের পণ্য হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেই উপস্থাপন করা উচিত।
বর্তমানে অনেক দেশের সরকারপ্রধান নারী। প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা, খেলাধুলাসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। এখন প্রশ্ন হলো, এতেই কি নারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে? নারীরা কি মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে? নারীরা কি পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হতে পেরেছে। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, কিছুটা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
বেগম রোকেয়ার লেখনীর জোরে কেবল নারীদের পর্দার বাইরে আনা গেছে। নারীর অধিকার আর প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারীরাও যেন তাতেই তুষ্ট। মানসিক দাসত্ব আজও তাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। নারীরা শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু বেগম রোকেয়ার দেখানো সুশিক্ষা লাভ করেনি।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
তথ্যসূত্র : দৈনিক সমকাল