স্বামী গায়ে হাত তুলবে, সংসারের অন্যান্য ধর্মকর্মের মতো রাগ হলে স্ত্রীকে মারবে, শোষণ করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের মা-খালাদের সময়টাতে জীবনচর্চা এমনই ছিল। স্বামী গায়ে হাত তুললে সেটাকে নির্যাতন মনে করেন না অনেক স্ত্রী। এটাই হয়ে আসছিল এতকাল। নারী নির্যাতিত হবে, শোষিত হবে, অধিকারহীন জীবনযাপন করবে। তবে শিক্ষার প্রসারতায় নারী এখন সচেতন। কাটিয়ে উঠছে সংকোচের সীমাবদ্ধতা। ঘরের নির্যাতনও যে নির্যাতন, এরও যে প্রতিবাদ করতে হয়, তা আমাদের নারীরা বুঝে সচেতন হয়েছেন। সেই সচেতনতার জের ধরেই আমরা আজ পালন করছি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিকান রিপাবলিকে বর্বরোচিত এক নির্যাতনে তিন নারী মারা যান। তাদের স্মরণ করে ১৯৮১ সালে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনবিরোধী দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে আসে আরেক ঘোষণা। এ ঘোষণায় জানানো হয়, ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর- এ সময়টাতে পালন করা হবে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ।’ দিবসটি বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল থেকে পালন করা শুরু হয়েছে। কিন্তু দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে তো আমরা কোনো সফলতা দেখতে পাচ্ছি না। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহভাবে যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখে মনে হয় সমাজ একটি বিবেকহীন, পাশবিক বিকলাঙ্গের দিকে এগুচ্ছে।
ভয়াবহ মাত্রায় নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করে না। গণমাধ্যমে সংবাদ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিই। কিন্তু বেশিরভাগ সময় রাষ্ট্রকে পাশে পাই না। এই যে সহিংস আচরণগুলো হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা জানা আমাদের জরুরি। দেশের আনাচে- কানাচে নির্যাতিত হচ্ছে নারী। কন্যাশিশু। প্রশাসনের উদ্যোগ কতটুকু দেখতে পাই? নারী ও শিশু নির্যাতনে প্রশাসনের উদ্যোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিচার কাজ এগিয়ে নিতে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা-পদক্ষেপ আমাদের নারী নির্যাতন অনেকখানি কমিয়ে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
তথ্যসূত্র : দৈনিক সমকাল